শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের শীত বস্ত্র বিতরণ

স্বাদের ইলিশ, অস্বাদের কথা

মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::

“আমাদের প্রিয় সোনামনি ভাত খাবে ঝাল দিবেনা ঝোলে, ইলিশ ভাজা খেতে মজা গরম গরম হলে”

হ্যা সত্যিই ইলিশ ভাজা গরম গরম হলে খেতে খুবই মজা। তা’ই না! যে মানুষগুলো আমাদের জন্য রাত দিন সাগর- নদীতে কত কষ্ট করে এই মাছ শিকার করছেন আমরা কী কখনো তাদের সেই ত্যাগগুলো জেনেছি বা জানার চেষ্টা করেছি? কেউ বলব হ্যা, আবার কেউ না। মাসের পর মাস সাগরের গভীরে কেমন ভাবে কাটছে তাদের দিন এবং সাগর কতটা নির্মম, কতটা নিষ্ঠুর তা কী একবারও জানার চেষ্টা করেছি? যখন জেলেরা মাছ শিকারের জন্য সাগরে যায় তখন তারা এক রকম সবার থেকে বিদয় নিয়েই যায়। আদৌ তারা ফিরে আসতে পারবে কি না তা তারা নিজেরাও জানেন না। পাড়ি জমান এক অজানা গন্তব্যে।

জীবণ বাচাতে মাছ আর সেই মাছ শিকারের জন্যই জীবনের ঝুকি নিয়ে পরিবার, প্রিয় সন্তান, বাবা- মা ছেড়ে চলে যান গভীর সাগরে। মিনিমাম ১০০থেকে ১০০০কিলোমিটার গভীরে। পরে থাকেন মাসের পর মাস। সাগরে থাকে উত্তপ্ত ঢেউ আর ঢেউ।একদিকে রাতে ঘুম নেই,অপর দিকে সাগরের নির্মম, নিষ্ঠুর আচরণ, জলদস্যু,কুমির এবং হাঙ্গরের ভয়। আবার অনেক সময় পেয়ে বসে সিডর,আইলার মত ভয়াবহ ঝড়। ২০০৭ সালে সিডরের পরে কূলে ভীরেছিল আমাদের গর্ভীত এই ইলিশ যোদ্ধাদের লাশ আর লাশ! আজও সেই কষ্ট ভুলার নয়।

এই মাছটির সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য হলো এরা দল বেধে চলে, পানির উপর থেকে নিচে আবার নিচ থেকে উপরে এবং যেখানে ব্যাপক মাছ থাকে সেখানকার পানি থাকে লালচে।পাশা পাশি অনেক বোট থাকলেও কেউ একবারে জিরো কেউবা হয়ে যায় হিরো।এর মানে হলো কোন বোট হয়ত একসাথে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ পেয়ে বসে আবার পাশের বোটে হয়তবা মাছই পেলনা। এই হলো সাগরের অবস্থা।একটি ইলিশের বোটে লোক থাকে মিনিমাম ১৫ থেকে ২০ জন করে। ইলিশের বোটে প্রধান নেতা হলেন মাঝি এবং সর্বনিম্ন পদটির নাম হল বাবুর্চী। সাধরণ জেলে এবং মালিক দু’পক্ষই মাছের সাথে সম্পর্কিত হলেও মূলত জীবনের ঝুকি নিয়ে গভীর সাগরে পরে থাকেন সাধারণ জেলেরা।

বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ অন্যান্য নদীতে ইলিশ পাওয়া গেলেও লক্ষ লক্ষ টন ইলিশ আসে মূলত বঙ্গপসাগর থেকে।আর এই বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। এটি ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর।বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর গভীর খাত বা যায়গাটি হলো “সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড” এটি ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গভীরতম এই উপত্যকা রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার। এর গড় গভীরতা প্রায় ১২০০ মিটার। বঙ্গোপসাগরের তীরে আটটি দেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ উপকূলে বসবাস করে। এদের বেশিরভাগই খাদ্য ও জীবিকা হিসেবে সাগরের মৎস সম্পদের উপরে নির্ভরশীল।

বাংলাদেশে ইলিশ অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম:Tenualosa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ।
ইলিশ বাঙালীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইলিশ মাছের এই প্রজাতিটি এশিয়ার প্রায় ১২টি দেশে পাওয়া যায়। দেশগুলোর মধ্যে পশ্চিম দিকে রয়েছে কুয়েত, বাহরাইন এবং পূর্বদিকে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন।ইলিশ বাংলাদেশের যেমনি জাতীয় মাছ তেমনি ভৌগলিক পণ্যও। এখন পর্যন্ত (২৫.০৩.২০২১) বাংলাদেশের ভৌগলিক পণ্য চারটি।বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক সামগ্রী হিসেবে স্বীকৃতি পায় জামদানি ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ।এবং ৬ আগস্ট ২০১৭ DPDT জাতীয় মাছ ইলিশ কে বাংলাদেশী পণ্য হিসাবে বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের কথা ঘোষণা করে। এর ফলে ইলিশ বাংলাদেশের দ্বিতীয় GI পণ্য হিসাবে নিবন্ধিত হলো। ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে ক্ষীরশাপাতি আমকে বাংলাদেশের ৩য় GI পণ্য (foodstuff) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মসলিনকে বাংলাদেশের চতুর্থ জিআই পণ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মা ইলিশ ডিম পাড়ে নদীতে৷ সমূদ্রের এই মাছটি তাই প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম পাড়তে৷ এ কারণে প্রতি বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে৷ এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে সেই রেকর্ড ভেঙে এখন পর্যন্ত ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।বাংলাদেশে ইলিশ প্রধান জেলা হল ১৭ টি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে মিঠাপানির মাছে বাংলাদেশ তার তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। বিশ্বে মাছ উৎপাদন বাড়ানোর দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। মজা করে ইলিশ তো খাই! জানি কি এই ইলিশের পুষ্টিগুণ? ১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২১ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন, বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। এর রয়েছে নানান উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ-খনিজ উপাদানে ভরপুর,হার্টের জন্য ভালো,রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, চোখ ভাল রাখে,ভিটামিন এ, ডি এবং ই রয়েছে প্রচুর। আবার অনেক সময় ইলিশ মাছ খেলে আমাদের কারো কারো শরীরে অ্যালার্জি বা গ্যাসের উদ্রেক হতে পারে।সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে না গিয়ে আস্তে আস্তে শরীরের সাথে এ্যাটজাস্ট করার চেষ্টা করতে হবে।

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যা জেনেছি তাতে পরিষ্কার ভাবে বুঝাই যাচ্ছে ইলিশ আমাদের গর্ব,আমাদের অহংকার।আর এই মাছ শিকারের জন্য জীবণের ঝুকি নিয়ে যেই মানুষগুলো সাগরে পড়ে থাকেন তারা আমাদের বীর ইলিশ যোদ্ধা। পরিশেষে একটি কথা বলা প্রয়োজন তাহলো অধিক মুনাফা লাভের আশায় আমরা যেন দেশের সাধারণ মানুষকে বেশি দাম চাপিয়ে দিয়ে ইলিশ খাওয়া থেকে বঞ্চিত না করি। আবারো ইলিশ যোদ্ধাদের প্রতি রইল আন্তরিক ভালবাসা।

লেখক : মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম: কলামিস্ট, শিক্ষাগুরু, প্রাবন্ধিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজকর্মী ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com